বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা কমবেশি প্রায়ই দেখা যায়। সাধারণত বিভিন্ন সময়ে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার কারণে বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হতে পারে। বাচ্চাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের চেয়ে তুলনামূলক কম হওয়ায় তারা বিভিন্ন সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে যায় খুব সহজেই। শিশুদের সাধারণত সর্দি কাশির সমস্যা বেশি দেখা গেলেও পাতলা পায়খানা এবং ডায়রিয়া হওয়ার আশঙ্কাও সচরাচর বেশিই থাকে। ফলে পাতলা পায়খানা অথবা ডায়রিয়ার কারণে শিশুদের শরীরের পানিশূন্যতা দেখা যায়।
তাই বাচ্চারা খুব সহজেই দুর্বল হয়ে যায়। বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা অথবা ডায়রিয়া কেন হয় এবং সুস্থ হওয়ার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানাবো আজকের পোস্টে। বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার সিরাপ, বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার ওষুধের নাম, পাতলা পায়খানার ট্যাবলেট সহ বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন এই পোস্টে।
পাতলা পায়খানা কী?
পাতলা পায়খানা ইংরেজি Slimming বলে। বাচ্চার দিনে অন্তত ৪ থেকে ৫ বার তরল পাতলা দুর্গন্ধযুক্ত মল নির্গত হওয়াকে পাতলা পায়খানা বলে। সাধারণত দুই তিন দিনেই বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা সমস্যা দূর হয়ে যায়। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে এই রোগ বেশি দিন পর্যন্ত চলমান থাকতে পারে। এই পাতলা পায়খানা যখন ডায়রিয়াতে রুপ নেয় তখন এর পরিধি ভয়ংকর হতে পারে। তাই পাতলা পায়খানা হওয়ার প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পাতলা পায়খানা এবং ডায়রিয়ার লক্ষণ
সাধারণত বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার চেয়ে ডায়রিয়া অধিক ক্ষতিকর হয়ে থাকে। প্রাথমিক অবস্থার পরে যখন পাতলা পায়খানা চলমান থাকে তখন তা পরবর্তীতে ডায়রিয়ায় রুপ নেয়। এখানে পাতলা পায়খানা এবং ডায়রিয়ার লক্ষ্মণগুলো দেওয়া হলো।
- তরল পানির মত মলত্যাগ হওয়া
- কিছু কিছু ক্ষেত্রে মলের সাথে ব্লাড আসা
- নিয়মিত বা অনিয়মিত বমি হওয়া
- শরীর ঝাঁকুনি দেওয়া
- তলপেটে প্রচুর ব্যাথা অনুভব করা
- ডিহাইড্রেশান
- শরীর নেতিয়ে যাওয়া
- শরীরে শক্তি না পাওয়া
- কখনো কখনো অচেতন হয়ে যাওয়া
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হওয়ার কারণ
ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা বিষক্রিয়া হওয়ার কারণে অনেক সময় বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হতে পারে। কখনো কখনো পেটের সংক্রমণের কারণে এই সমস্যা কমবেশি হয়ে থাকে। কিছু কিছু বাচ্চার খাবারে অ্যালার্জি জনিত সমস্যার কারণেও পাতলা পায়খানা হতে পারে। এখানে বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হওয়ার কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো।
পেটের সংক্রমণে পাতলা পায়খানা
বিভিন্ন সময়ে কাঁচা খাবার অথবা বাসী খাবার সহ নোংরা খাবার খাওয়ার ফলে উক্ত খাবারের জীবানু শিশুদের পাকস্থলীতে সংক্রমণ সৃষ্টি করে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এতে বাচ্চার পাতলা পায়খানা হয়ে বাচ্চা অসুস্থ হয়ে যায় এবং এটিই পরবর্তীতে ডায়রিয়াতে রুপ নেয়। রোটাভাইরাস, সালমোনেলা ভাইরাস, অ্যাডিনোভাইরাস এবং ব্যাক্টিরিয়া বাচ্চাদের আক্রমণ করে ফলে বাচ্চারা পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়।
অ্যালার্জি জনিত খাবার খাওয়ানো
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বাচ্চারা যখন মায়ের দুধ ছেড়ে প্রথবারের মত অন্য খাবার খাওয়া আরম্ভ করে তখন অনেক খাবারেই তাদের অ্যালার্জি সমস্যা হয় থাকে। এটাকে মূলত বলা হয় ফুড অ্যালার্জি যার লক্ষ্মণ প্রকাশ পায় বাচ্চার মুখ এবং চোখ সহ ঠোঁটের কোন কোন অংশে। ফুড অ্যালার্জি দেখা দিলে বাচ্চাদের মুখ ঠোঁট এবং চোখ অস্বাভাবিক ফুলে উঠতে পারে অথবা কখনো কখনো বমি হতে পারে। আবার কখনো কখনো এর লক্ষ্মণ প্রকাশ পায় ত্বকের বিভিন্ন অংশে লাল রঙের ছোপ চাকা চাকা দাগ দেখা যায় এবং পাতলা পায়খানা শুরু হয়।
সুক্রোজ যুক্ত খাবার ও পানীয় হজমে ব্যর্থ হলে
সুক্রোজ হলো টেবিল সুগার অথবা সাদা চিনি যা খাওয়ার পরে বাচ্চাদের অনেক সময় পাতলা পায়খানা হতে পারে। আবার ফ্রুক্টোজহলো শর্করা জাতীয় পদার্থ যা ফলমূল, মধু ও বিভিন্ন প্রকার জুসে মিশ্রিত থাকে। এই ফ্রুক্টোজ আপনার বাচ্চার পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার জন্য দায়ী হতে পারে। কেননা বাচ্চাদের সবার হজমশক্তি সমান নয়, ফলে অনেক বাচ্চারা এই ফ্রুক্টোজ জাতীয় শর্করা হজম করতে পারে না তাই তারা পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে যায়। তবে আস্তে আস্তে এই শর্করা পদার্থ বাচ্চাদের সহনশীলত মাত্রায় উপনীত হয় তাই পরবর্তীতে কোন ধরনের সমস্যা হয় না।
অত্যাধিক গরম আবহাওয়া
আবহাওয়ার প্রতিকূলতার কারণে অত্যাধিক গরমের বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হতে পারে। তাই এই সময়ে বাচ্চাদের প্রতি খেয়াল রাখা এবং যত্নশীল হওয়া প্রত্যেক বাবা মায়ের দায়িত্ব। এই গরমে বাচ্চারা যেন ডিহাইড্রেটেড না হয়ে যায় সেদিকে মনোযোগী হওয়া এবং সবসময় বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখাটা খুবই জরুরি।
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার মতো রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে। সাধারণত দুই বছর বয়সী বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটা বেশ লক্ষণীয়। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার পলে সৃষ্টি হওয়া পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া এক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ীত্ব হতে পারে। আপনার যদি মনে হয় আপনার বাচ্চার ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে পাতলা পায়খানা হচ্ছে তাহলে আপনি অতি দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।
শিশুকে কখন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে
- ডিহাইড্রেশানের লক্ষ্মণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে
- পাতলা পায়খানার স্থায়ীত্ব ২ দিনের বেশি হলে
- বাচ্চার শরীরর জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে।
- মল ত্যাগ করার সময় মলের সাথে ব্লাড আসলে
- মলের রং অস্বাভাবিক বা কালো হলে
- বাচ্চা খাবার না খেলে
- দিনে ৩ থেকে ৪ বার পাতলা পায়খানা হলে
নবজাতকের পাতলা পায়খানা হলে করণীয়
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনার বাচ্চাকে সুস্থ সবল করে তুলতে পারবেন। পাতলা পায়খানা বন্ধ করার উপায় সমূহ নিচে দেওয়া হলো।
স্যালাইন খাওয়ানো
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা ঘরোয়া উপায়ে সারানোর প্রথম ও প্রধান উপায় হচ্ছে স্যালাইন খাওয়ানো। যেহেতু এসময় শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয় তাই পানিশূন্যতা পূরণে স্যালাইন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই প্রথম পর্যায়ে আপনার বাচ্চার পাতলা পায়খানার জন্য স্যালাইন খাওয়ানোর বিকল্প নেই।
নুন এবং চিনির পানি খাওয়ানো
পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে বাচ্চাদের পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তাই শরীরে পানির স্বল্পতা পূরণে নুন এবং চিনির পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে ১ লিটার পানির মধ্যে ১ চা চামচ নুন এবং ৮ চা চামচ চিনি মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করে নিন। এবার এই দ্রবণ অল্প অল্প করে সারাদিন বাচ্চাকে খাওয়াতে পারেন। তবে অবশ্যই ১২ ঘন্টার মধ্যে খাওয়াবেন। ১২ ঘন্টা অতিক্রম হওয়ার পরে এই দ্রবণ খাওয়ানো যাবে না। মনে রাখবেন কখনোই গরম পানি দিয়ে দ্রবণ তৈরি করবেন না এবং দ্রবণ গরম করবেন না।
ভাতের ফ্যান খাওয়ানো
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া প্রতিরোধে ভাতের ফ্যান পান করালে খুবই দ্রুত বাচ্চারা সুস্থ হতে পারে। ভাতের ফ্যান সাধারণত ইলেকট্রলাইট সলিউশানের বিকল্প হিসেবে কাজ করে থাকে ফলে বাচ্চার পাতলা পায়খানা সহজেই ভালো হয়ে যায়। তবে বিশেষজ্ঞদের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে ভাতের ফ্যান ওরাল ইলেক্ট্রলাইট সলিউশানের থেকে অত্যাধিক বেশি কার্যকরী।
ডাবের পানি খাওয়ানো
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া প্রতিকারে ডাবের পানি বেশ উপকারী। গ্লুকোজ ইলেক্ট্রলাইট হিসেবে ডাবের পানি কাজ করে থাকে ফলে বাচ্চার সামান্য পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার প্রতিকার হতে পারে।
প্রোবায়োটিকস যুক্ত খাবার খাওয়ানো
পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে আপনার বাচ্চাকে প্রোবায়োটিকস যুক্ত খাবার দিতে পারেন। এটি সাধারণত পাতলা পায়খানার জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু প্রতিরোধ করতে সক্ষম বলে বেশ কার্যকরী। তবে প্রোবায়োটিকস ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই আপনাকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। আপনি প্রোবায়োটিকস হিসেবে আপনার বাচ্চাকে দই খাওয়াতে পারেন কারণ দই হলো প্রোবায়োটিকস এর একটি অন্যতম প্রাকৃতিক উৎস।
কলা এবং মুড়ি খাওয়ানো
বাচ্চার পাতলা পায়খানা হলে শরীরের পুষ্টির ঘাটতি থাকে ফলে বাচ্চার পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিত করতে কলা খাওয়ানো যেতে পারে। কেননা কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম এবং ভিটামিন এ এর মতো পুষ্টিকর উপাদান সমূহ যা বাচ্চা পুষ্টি ঘাটতি পূরণে বেশ সহায়তা করবে। আবার কখনো কখনো বাচ্চাকে পানি এবং মুড়ি খাওয়ানো যেতে পারে। এটি বাচ্চার ভেটের ক্ষুধা নিবারণে যেমন সাহায্য করবে তেমনি বাচ্চার শরীরের পানিশূন্যতা পূরণ করতে ভুমিকা রাখবে।
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া প্রতিরোধে সতর্কতা
- সবসময় বাচ্চাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
- বাচ্চার ঘুমানোর স্থান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
- বাচ্চার কাপড় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
- খাবার খাওয়ানোর ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা।
- অনেকক্ষণ ধরে সংরক্ষণ করা খাবার পরিহার করা।
- খাবার খাওয়ানোর পূর্বে হাত ভালোমতো পরিষ্কার করা।
- বাচ্চার শরীরে পানিশূন্যতা যেন না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখা।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করানো।
পাতলা পায়খানা হলে কি কি খাওয়া যাবে
- কলা খাওয়া যেতে পারে
- চিড়া বা মুড়ি
- ডাবের পানি
- ভাতের ফ্যান
- নুন ও চিনির পানি
- নরম খাবার যেমন খিচুড়ি
- পানি পানি ডাল
- দধি বা দই
- মুরগির মাংস
- লেবুর শরবত
- ভাতের মাড়
- লাচ্ছি
- কম লিকারের চা
- চর্বি জাতীয় খাবার
- মসুর ডাল
- আম
- আমারস
- পেঁপে
- নারিকেলের দুধ
- টক জাতীয় ফল
পাতলা পায়খানা হলে কি কি খাওয়া যাবে না
- আপেলের রস
- তেলেভাজা খাবার
- ভারী কোনও ফলের রস
- অধিক সময় ধরে সংরক্ষিত খাবার
- ডিম বা কাঁচা দুধ
- কাঁচা নারকেল
- কৃত্রিম ফলের বোতলের জুস
- গরুর মাংস
- খাসির মাংস
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার ওষুধের নাম
পাতলা পায়খানার ট্যাবলেট অথবা পাতলা পায়খানা হলে কি ঔষধ খেতে হবে সে সংক্রান্ত কিছু ঔষধের নাম এখানে দেওয়া হলো-
- খাবার স্যালাইন [saline]
- লোপেরামাইড [Loperamide]
- সিপ্রোফ্লক্সাসিন [Ciprofloxacin]
- এজিথ্রোমাইসিন [Azithromycin]
- ফ্লাজিল [Flagyl]
- জিংক ট্যাবলেট [Zinc tablets]
- এসপিরিন [Aspirin]
- এমোডিস [Amodis]
বিঃদ্রঃ এই ওষুধ সমূহ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন অবস্থাতেই গ্রহণ করা যাবে না।
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার সিরাপ
শিশুদের পাতলা পায়খানার জন্য এই সিরাপ গুলো খাওয়ানো যেতে পারে।
- জিংক সিরাপ [zinc Syrup]
- সিপ্রোসিন সিরাপ [Ciprocin Syrup]
- এমোডিস সিরাপ [Amodis Syrup]
- যক্স সিরাপ [Zox Syrup]
- ফিলমেট সিরাপ [Filmet Syrup]
- নাইটানিড সিরাপ [Nitanid Syrup]
বিঃদ্রঃ এই সিরাপ সমূহ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন অবস্থাতেই গ্রহণ করা যাবে না।
শিশুর পাতলা পায়খানার এন্টিবায়োটিক
এখানে পাতলা পায়খানার জন্য কিছু এন্টিবায়োটিক ওষুধের নাম দেওয়া হলো-
- সিপ্রোফ্লক্সাসিন [Ciprofloxacin]
- মেট্রোনিডাজল [Metronidazole]
- অ্যাজিথ্রোমাইসিন [Azithromycin]
বিঃদ্রঃ এই এন্টিবায়োটিক ওষুধ সমূহ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন অবস্থাতেই গ্রহণ করা যাবে না।
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা সম্পর্কিত FAQS
আপনারা অনেকেই বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা সম্পর্কিত অনেক প্রশ্ন করে থাকেন। তাই তাদের জন্য বাছাই করা কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। প্রশ্নগুলো পড়ে উত্তর সমূহ বোঝার চেষ্টা করবেন। আশা করছি আপনাদের আর কোন সমস্যা থাকবে এই সংক্রান্ত বিষয়ে। তাই সম্পূর্ণ প্রশ্নোত্তর পর্ব মনযোগ সহকারে পড়ুন এবং আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
১ মাসের শিশুর পাতলা পায়খানা হলে করণীয়
বিভিন্ন কারণে এক মাস বয়সের শিশু বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হতে পারে। তবে এতে চিন্তার কিছু নেই। ঘনঘন মায়ের বুকের দুধ পান করানো যেতে পারে। প্রতিবার পাতলা পায়খানার পরে খাবার স্যালাইন ৫ থেকে ১০ চা চামচ পরিমাণ শিশুকে খাওয়াতে পারেন। যেহেতু শিশুর শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয় তাই স্যালাইন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে যদি ২৪ ঘন্টার মধ্যে পাতলা পায়খানা না কমে তাহলে অতি দ্রুত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করে চিকিৎসার ব্যাবস্থা করা উচিৎ।
২ মাসের শিশুর পাতলা পায়খানা হলে করণীয়
- ঘন ঘন মায়ের বুকের দুধ পান করানো।
- পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
- প্রতিবার পাতলা পায়খানা হওয়ার পরে ৬ থেকে ১০ চা চামচ পরিমাণ খাবার স্যালাইন খাওয়ানো।
- পানিশূন্যতা পূরণে বেশি বেশি দুধ পান করানো।
- তবে জোর করে খাওনো যাবে না।
- ২৪ ঘন্টার মধ্যে পাতলা পায়খানা না কমলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করে চিকিৎসা করা।
৩ মাসের শিশুর পাতলা পায়খানা হলে করণীয়
- সবসময় বাচ্চাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
- মায়ের বুকের দুধ পান করানো।
- প্রতিবার পাতলা পায়খানার পরে ৫ থেকে ১০ চা চামচ পরিমাণ খাবার স্যালাইন পান করানো।
- ঘন ঘন দুধ পান করানো।
- পানিশূন্যতা পূরণে খাবার স্যালাইন খাওয়ানো চলমান রাখা।
- ২৪ ঘন্টার মধ্যে পাতলা পায়খানা না যদি কমে তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া।
৪ মাসের শিশুর পাতলা পায়খানা হলে করণীয়
- বাচ্চাকে সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
- নিয়মিত মায়ের বুকের দুধ পান করানো।
- প্রতিবার পায়খানার পরে খাবার স্যালাইন খাওয়ানো।
- ৫ থেকে ১০ চা চামচ পরিমাণ খাবার স্যালাইন পান করানো।
- পানিশূন্যতার জন্য ঘন ঘন দুধ পান করানো এবং খাবার স্যালাইন খাওয়ানো।
- ২৪ ঘন্টার মধ্যে পাতলা পায়খানা না কমলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তার দেখানো।
৫ মাসের শিশুর পাতলা পায়খানা হলে করণীয়
- শিশুকে যথাসাধ্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করা।
- ভালোভাবে মায়ের বুকের দুধ পান করানো।
- পায়খানা করার পর মায়ের বুকের দুধ পান করিয়ে পূনরায় ক্ষুধা নিবারণ করা।
- সবসময় পায়খানা করার পর খাবার স্যালাইন খাওয়ানো।
- ১০ থেকে ১৫ চা চামচ পরিমাণ খাবার স্যালাইন খাওয়ানো।
- পানিশূন্যতা পূরণের জন্য ঘন ঘন দুধ পান করানো।
- ২৪ ঘন্টার মধ্যে পাতলা পায়খানা কমার কোন লক্ষ্মণ না থাকলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানো।
৬ মাসের শিশুর পাতলা পায়খানা হলে করণীয়
- বাচ্চাকে সর্বদা পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করা।
- মায়ের বুকের দুধ পান করানো।
- প্রতিবার পায়খানা করার পর ১০ থেকে ২০ চা চামচ পরিমাণ খাবার স্যালাইন খাওয়ানো।
- পানিশূন্যতা পূরণে ডাবের পানি দেওয়া যেতে পারে।
- ঘন ঘন দুধ পান করানো
- ২৪ ঘন্টার মধ্যে না কমলে ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিৎসা করানো।
৭ মাসের শিশুর পাতলা পায়খানা হলে করণীয়
- বাচ্চার প্রতি যত্নশীল হওয়া।
- সবসময় বাচ্চাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ও বাচ্চার ব্যাবহৃত সকল পোষাক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
- ঘন ঘন মায়ের বুকের দুধ পান করানো।
- প্রতিবার পাতলা পায়খানার পরে ১০ থেকে ২০ চা চামচ পরিমাণ খাবার স্যালাইন দেওয়া।
- পানিশূন্যতা পূরণের জন্য সামান্য ডাবের পানি খাওয়ানো যেতে পারে।
- ২৪ ঘন্টার মধ্যে ভালো ফলাফল না পেলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা।
৮ মাসের শিশুর পাতলা পায়খানা হলে করণীয়
- প্রথমত বাচ্চার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেওয়া।
- বাচ্চারকে মায়ের বুকের দুধ পান করানো।
- পায়খানা যতবার হবে ততবারই খাবার স্যালাইন খাওয়ানো।
- ১০ থেকে ২০ চা চামচ পরিমাণ খাবার স্যালাইন দিতে পারেন।
- ঘন ঘন দুধ পান করানো।
- পানিশূন্যতা দূর করতে ডাবের পানি খাওয়ানো যেতে পারে।
- ২৪ ঘন্টার মধ্যে পাতলা পায়খানা না কমলে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করা।
৯ মাসের শিশুর পাতলা পায়খানা হলে করণীয়
- প্রথমত বাচ্চার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা।
- বাচ্চাকে মায়ের বুকের দুধ পান করানো।
- পায়খানা করার পর খাবার স্যালাইন খাওয়ানো।
- পানিশূন্যতা পূরণে ডাবের পানি দেওয়া যেতে পারে তবে সর্দি কাশি থাকলে দেওয়া যাবে না।
- ঘন ঘন দুধ পান করানো।
- ১০ থেকে ২০ চা চামচ পরিমাণ করে খাবার স্যালাইন খাওয়ানো।
- ২৪ ঘন্টার মধ্যে সুস্থ না হলে ডাক্তার দেখানো।
১০ মাসের শিশুর পাতলা পায়খানা হলে করণীয়
- বাচ্চাকে পরিষ্কার রাখা ও বাচ্চার প্রতি যত্নশীল হওয়া।
- ঘন ঘন মায়ের বুকের দুধ পান করানো।
- প্রতিবার পায়খানা করার পর ১০ থেকে ২০ চা চামচ পরিমাণ খাবার স্যালাইন খেতে দেওয়া।
- পানিশূন্যতা দূর করতে ডাবের পানি খাওয়ানো।
- ২৪ ঘন্টার মধ্যে পাতলা পায়খানা না কমলে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিৎসা নেওয়া।
১১ মাসের শিশুর পাতলা পায়খানা হলে করণীয়
- চেষ্টা করবেন বাচ্চাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে।
- নিয়মিত মায়ের বুকের দুধ পান করানো।
- খাবার স্যালাইন ১০ থেকে ২০ চা চামচ পরিমাণ করে খাওয়ানো।
- শরীরের পানিশূন্যতা পূরণে ডাবের পানি পান করানো যেতে পারে।
- ২৪ ঘন্টার মধ্যে সুস্থ না হলে ডাক্তার দেখানো আবশ্যক।
পাতলা পায়খানা হলে কি চিড়া খাওয়া যাবে
হ্যা অবশ্যই চিড়া খাওয়া যাবে এতে আরো উপকার হবে আশা করি। চিড়া খেলে আপনার পাতলা পায়খানা কমে যেতে পারে কারণ হলো চিড়ার পানি আপনার পায়খানা শক্ত করতে বেশ সাহায্য করে থাকে। তাই আপনি যদি পাতলা পায়খানা থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে চিড়া বা চিড়ার পানি খেতে পারেন। এতে করে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে আশা করছি।
পাতলা পায়খানা হলে কি কলা খাওয়া যাবে
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে অবশ্যই কলা খাওয়া যাবে। কেননা কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম এবং ভিটামিন যা আপনার পাতলা পায়খানা কমাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অতএব আপনি নিশ্চিন্তে কলা খেতে পারেন এতে কোন প্রকার সমস্যা নেই।
বমি ও পাতলা পায়খানা হলে করণীয়
বমি এবং বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা একসাথে হওয়া তেমন একটা ভালো লক্ষ্মণ নয়। বমি এবং বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। প্রতিবার বমি হওয়ার অন্তত ১০ মিনিট পর খাবার স্যালাইন গ্রহণ করা উচিৎ। আর পায়খানা হওয়ার পরে বেশি বেশি খাবার স্যালাইন এবং ডাবের পানি পান করার বিকল্প নেই।
জ্বর ও পাতলা পায়খানা হলে করণীয়
জ্বর এবং বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা একসাথে হওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই বেশি সচেতন হতে হবে। প্রথমত সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং পরিষ্কার হয়ে খাবার গ্রহণ করতে হবে। খাবার স্যালাইন খাওয়া চলমান থাকতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে। পানিশূন্যতা পূরণের জন্য ডাবের পানি খাওয়া যেতে পারে যদি সর্দি কাশি না থাকে।
পরিশেষে
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে করণীয়, বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার ওষুধের নাম, বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার সিরাপ সহ শিশুর পাতলা পায়খানার এন্টিবায়োটিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এই পোস্টে। আপনার সন্তানের প্রতি যত্নশীল হবেন সবসময়। কোনপ্রকার ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া বাচ্চাকে খাওয়াবেন না। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ তাই তাদের পুষ্টি চাহিদা পূরণে ও শারিরীক মানসিক বিকাশে আপনারাই দায়িত্ব পালন করবেন। সময় ব্লগের পক্ষ থেকে আপনাদের প্রতি শুভকামনা ও ভালোবাসা রইল।